করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় দেওয়া ঋণের টাকা ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ’র যে অভিযোগ উঠেছে- তা যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার ২০তম অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত এবং ২৫তম সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।
অনলাইন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যারা রেমিট্যান্স পাঠান তাদের আমরা ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছি। যারা টাকা পাঠান এবং যারা এখানে সেই টাকা রিসিভ করেন, তারা টাকা হাতে এলে তা নিজেরাও ব্যয় করতে পারবেন। পুঁজিবাজারেও ব্যয় করতে পারবেন। সে কারণে পুঁজিবাজারে টাকা গেছে বলে আমরা জানি। প্রণোদনার প্যাকেজের ঋণের টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে তথ্য আমি পাইনি। আমি এখন এটি ভেরিফাই করব। আমরা পরবর্তী সভায় জবাব দেব। আমাকে আগে জানতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রণোদনার প্যাকেজের যেগুলো কোভিড রিলেটেড সেগুলো স্পেসিফাইড করা আছে কোন খাতে আমরা কত ব্যয় করব। সেই খাত বাদ দিয়ে অন্য কোথাও টাকা যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমরা এ টাকা সরাসরি ট্রান্সফার করেছি। যার জন্য টাকাটি অনুমোদিত হয়েছে তাকেই আমি পাঠিয়েছি। সুতরাং সেই টাকা রিসিভ করে সে কি করবে সেটা পরবর্তী পর্যায়ে আমাদের ভেরিফাই করতে হবে। আগামীতে দেখব যদি এ ধরনের আরও কোনো ঘটনা ঘটে, যদিও আমার বিশ্বাস ঘটেনি, কারণ যাদের দিয়েছি আপনারা জানেন কোন কোন খাতে কোন কোন সেক্টরকে টাকা দিয়েছি। সেখান থেকে টাকা পুঁজিবাজারে যাওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেফারেন্স যেহেতু দিয়েছেন সুতরাং আমাকে এটি আরও ভেরিফাই করতে হবে। ভেরিফিকেশন করার পর আমি সম্পূর্ণ তথ্য দিতে পারব।
বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যত বেশি ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আকর্ষণ করতে পারবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল। তিনি জানান, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত বৈঠকে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ডান তীরে লালদিয়া চর এলাকায় ৫৯ দশমিক ৮৭ একর জমির ওপর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) প্রস্তাবিত ‘কনস্ট্রাকশন অব লালদিয়া বাল্ক টার্মিনাল’ প্রকল্পটি পিপিপি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইনিশিয়াল স্টেজে যে ধ্যান-ধারণা নিয়ে প্রকল্পটি করা হয়েছিল, পরে দেখা গেছে প্রকল্পটি সেভাবে করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, এখানেও চাহিদা বেড়ে গেছে। এখানে যে পরিমাণ জায়গা, সেগুলো যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে চাহিদা মেটাতে পারব না। সেজন্য কিছু কিছু প্রকল্প এভাবে বাদ দিতে হয়। পিপিপি ভালো কিছু বয়ে আনছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তো প্রকল্প হচ্ছেই। পিপিপি কনসেপ্টটি আমরা এখনো ভালোভাবে নিতে পারিনি, এটা সত্য। তারপরও কাজ শুরু হয়েছে। যৌথভাবে শুরু করলে এ সময়টা দিতে হবে। যেসব বিষয় আমাদের ফেস করতে হচ্ছে, সেগুলো মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাব। এখন আমাদের হাতে টাকা আছে নিজেরা ব্যয় করছি। কিন্তু আমরা চাই ফরেন ইনভেস্টমেন্ট। যত বেশি ফরেন ইনভেস্টমেন্ট আকর্ষণ করতে পারব, ততই আমাদের জন্য মঙ্গল।
তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে আমরা পিপিপিতে উন্নতি করতে পারিনি কারণ আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ছিল না। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বলতে ফিজিক্যাল নন-ফিজিক্যাল বোথ। এখন আমরা সব ধরনের ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জন্য ক্যাপাবল। সেজন্য আমরা মনে করি পিপিপি কনসেপ্ট এবং ডিরেক্ট ফরেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাহত হবে না। সামনের দিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও জানান, বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের বছরব্যাপী গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে সমাপনী ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাস্তবায়নে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম নিয়োগ, নগর সজ্জা এবং দেশে-বিদেশে ওয়ার্কশপ-সেমিনার-কনফারেন্স, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী আয়োজনসহ বিভিন্ন প্রকাশনা, ভিডিও, ডকুমেন্টারি, এলইডি স্ক্রিন স্থাপন এবং আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সেবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের আওতায় ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টারের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ওরাকল ক্লাউড ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।