বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে এ বছর ৯৮ লটের টেন্ডারে অংশ নিয়েছে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে গত বছরের কালো তালিকাভুক্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানের কেউই এবার টেন্ডারে অংশ নিতে পারছে না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে টেন্ডারের সামগ্রিক প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। আগামী ৯ আগস্ট টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই প্রাথমিক স্তরের (তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণী) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের বিনামূল্যে তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৬ কপি পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আহ্বান করা ৯৮টি লটের মধ্যে ৫২টি লটের ওই পরিমাণ পুস্তক মুদ্রণের জন্য মোট ব্যয় হবে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
সূত মতে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর) বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য ৮৫টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ৯৮টি লটের জন্য ৫২২টি দরপত্র নির্দেশিকা ক্রয় করা হয় এবং ২৭৪টি দরপত্র দাখিল করা হয়। প্রতিটি দরপত্র নির্দেশিকায় ৯৮টি লটের যেকোনো একটিতে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়।
সূত্র আরো জানায়, এ বছর মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ২৭৪টি দরপত্র দাখিল হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়নে দাখিলকৃত ২৭৪টি দরপত্রের মধ্যে শিডিউলে সন্নিবেশিত শর্তসমূহ পূরণ করায় কারিগরি ও আর্থিক বিবেচনায় ২৬৫টি দরপত্র রেসপনসিভ এবং ৯টি দরপত্র নন-সেপনসিভ বলে বিবেচিত হয়। দাখিলকৃত ২৭৪টি দরপত্রের মূল্যায়নকালে ৯৮টি লটের মধ্যে ৫২টি লটে সর্বনিম্ন রেসপনসিভ দরদাতার দর গ্রহণের এবং ৪৬টি লটের জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে ৯৮টি লটে সর্বমোট সাত কোটি ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৮০৬ কপি পাঠ্যপুস্তকের সুপারিশকৃত ৫২টি লটের মধ্যে অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেস ৪৬টি লটে মোট তিন কোটি ৩১ লাখ আট হাজার ১১৮ কপি পাঠ্যপুস্তকের উদ্ধৃত দর ১০১ কোটি ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯২ টাকা। যার প্রাক্কলিত দর ১০২ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৪৭ এবং কচুয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের ৬টি লটে মোট ৪৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৮ কপি পাঠ্যপুস্তকের উদ্ধৃত দর ১৪ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার ৮৪৭ টাকা যার প্রাক্কলিত দর ১৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৮ টাকা। সর্বমোট ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৬ কপি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য সর্বমোট প্রাক্কলিত দর ১১৬ কোটি ৫১ লাখ ৩ হাজার ২৯৫ টাকা যা সর্বমোট প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ০.৫৯ শতাংশ কম।
এনসিটিবির উৎপাদক নিয়ন্ত্রক মোঃ সাইদুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার জানান, টেন্ডারের সামগ্রিক সব কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৯ আগস্ট আমরা টেন্ডার ওপেন করব। সেখানে অংশ নেয়া সর্বনিম্ন দরদাতাদের নাম প্রকাশ করা হবে। এবং এরপর নির্বাচিত মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকাও প্রকাশ করবে এনসিটিবি। এভাবেই পর্যায়ক্রমে আমরা কার্যাদেশ দিয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে পারব বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, দরদাতাদের দরপত্রের বৈধতার মেয়াদ আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর উত্তীর্ণ হবে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত ২৯ জুলাই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয় বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।