জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ও উপকূলবাসী। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি চালুর পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে উপকূলীয় সব মানুষের খাবার পানির স্থায়ী সমাধানের তাগিদ দেন তারা।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে সংলাপ হয়। ‘দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপ বক্তৃতায় বক্তারা সুন্দরবন ও উপকূলবাসীর ঝুঁকিগুলো তুলে ধরেন। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দেন।
সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার ও সংসদ সদস্যরা।
সংলাপে উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, জলবায়ু ঝুঁকি, দারিদ্র্য ও বিপদাপন্নতার মাত্রা বিবেচনায় খুলনা, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট জেলার অধীন উপকূল সংশ্লিষ্ট উপজেলাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (বিশেষ করে নগদ ও খাদ্য সহায়তা) আওতা বাড়াতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে ‘একটি বাড়ি একটি শেল্টার’ কার্যক্রম করতে হবে। ওই এলাকার সাইক্লোন শেল্টারগুলো সংস্কার এবং নারী ও শিশুবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।
সংলাপে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুন্দরবন ও উপকূল রক্ষায় কাজ করছে সরকার। দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে সুন্দরবনের সুরক্ষা, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে নেওয়া হয়েছে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা। ঝুঁকি মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি সচেতনতা বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কাজ করার আহ্বান জানান।
পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, বিগত দিনে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প নিলেও সেই প্রকল্প জনজীবনে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারছে না। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ভুক্তভোগী জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
সরকারের প্রকল্প গ্রহণে কারসাজির অভিযোগ উত্থাপন করেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। তিনি বলেন, নদী খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হলেও তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার বিশেষ ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রকল্পের ডিপিপি দেওয়া হয়। এমনকি মন্ত্রীদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের অনীহা দেখা যায়।
উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের প্রস্তাবের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার। বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে উন্নয়নে বড় বাধা সমন্বয়হীনতার। এ জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি পৃথক একটি সংস্থা গঠন করা জরুরি।
সংলাপে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, উপকূলীয় এলাকায় মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে হলে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে অনুধাবন করতে হবে। স্থানীয় মানুষের সম্পৃক্ততায় একটি টেকসই, সমন্বিত এবং বিভিন্ন মেয়াদী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এই সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করবেন লিডার্সের নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মণ্ডল।