বিয়েতে ঘটা করে শেরওয়ানি পরার চল অনেক দেশেই আছে। এ দেশেও পাঞ্জাবি বা শেরওয়ানি ছাড়া বরের সাজ সম্পূর্ণ হয় না! কনের পোশাকের মতো বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের পোশাক হিসেবে শেরওয়ানিই বেছে নেন কমবেশি সবাই।
তাই সৌন্দর্য ও কারুকার্যের ওপর শেরওয়ানি নানা ধরনের হয়। ফলে দামেও থাকে ভিন্নতা। শেরওয়ানির দাম কোনোটি ৫ হাজার টাকা আবার কোনোটি ৩০ হাজার টাকাও হতে পারে। দামের ভিন্নতার জন্য ক্রেতাদের সামর্থ্যের ওপর বিক্রিও নির্ভর করে।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে বিয়ের অনুষ্ঠানের যাবতীয় জিনিসপত্র বিক্রি করা দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলিমদের আভিজাত্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয় শেরওয়ানি। কুর্তার উপরে পরা হয় এই বিশেষ পোশাক। আর নিম্নাঙ্গে চুড়িদার, ধুতি, পাজামা কিংবা একটি সালোয়ারের সমন্বয় করে পরা হয়।
আর মাথায় বিভিন্ন ধরনের পাগড়ি পরেন বর। এ সবই বিয়ের অনুষ্ঠানে বরকে আকর্ষণীয় করে তোলে। তবে বিয়ের পোশাক হিসেবে শেরওয়ানি যত ভালো, বরের সৌন্দর্যও ফুটে ওঠে তত বেশি।
দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা কারুকাজ ও কাপড়ের মান অনুযায়ী শেরওয়ানির দামও ভিন্ন হয়। যে শেরওয়ানির কারুকাজ ও কাপড়ের মান কম, সেটির দামও কম।
সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা হলেই কেনা যায় এসব শেরওয়ানি। আর যেটিতে কারুকাজ বেশি ও কাপড়ের মানও ভালো সেটির দামও বেশি।
১০ হাজার, ১৫ হাজার এমনকি ৩০-৪০ হাজার টাকাও দাম হতে পারে এসব শেরওয়ানির। ভারতীয়, রাজস্তান, কোহলি ডিজাইনসহ বেশ কয়েকটি ডিজাইন আছে শেরওয়ানির।
রাজধানীর এসব দোকানে যেসব শেরওয়ানি পাওয়া যায়, সেগুলোর কাপড় আনা হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। তবে শেরওয়ানি প্রস্তুত করা হয় নিজস্ব কারখানায়।
শুধু বরের শেরওয়ানিই নয়, আছে ছোট-বড়সহ অন্যদের জন্য সাধারণ শেরওয়ানিও। এসবের দাম বরের শেরওয়ানির তুলনায় বেশ কম। শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানেই নয়, শেরওয়ানি পরা হয় এখন অন্যান্য প্রথাগত অনুষ্ঠানেও।
বিয়ের অনুষ্ঠানে শেরওয়ানির পাশাপাশি বরের জন্য মোটামুটি বেশ কিছু জিনিস যেমন- পাগড়ি, পায়জামা, ওড়না, মালা নাগরা (জুতা) ইত্যাদি।
এসব চাইলে সেট হিসেবেও কিনতে পারবেন। আর একসেট বরের পোশাকের দাম ৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকাও হতে পারে। ছোটদেরগুলো ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শেরওয়ানিসহ বিয়ের জিনিসপত্র বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা। তবে এবার বিক্রি কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন তারা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক সহিংসতা, নির্বাচনী বছর হওয়ার কারণে বিক্রি কিছুটা কম বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
‘পারফেক্ট ওয়েডিংয়ের’ বিক্রয়কর্মী মো. আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিক্রি কম হচ্ছে। কম দামের মধ্যেই শেরওয়ানির সঙ্গে পাগড়ি, পায়জামাসহ সবকিছুই ক্রয় করতে চান ক্রেতারা।’
অন্যদিকে বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বলেও মনে করেন ক্রেতারা। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই বিয়ে করবেন নরসিংদীর আদনান আল হোসাইন।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ব্যবসা করা আদনান বিয়ের জিনিসপত্র কিনতে এসে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি শেরওয়ানি দেখলাম। পছন্দও হয়েছে, তবে দাম অনেক বেশি চান দোকানদাররা। নরমাল একটি শেরওয়ানির দামও ৬-৭ হাজার টাকা চাচ্ছে।’
এদিকে মাস্টার শেরওয়ানি সেন্টারের মালিক মো. মাসুদ মাস্টার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বরের শেরওয়ানি বিভিন্ন ডিজাইনের। এর কোনোটি ৫ হাজার টাকা দামের, কোনোটি ৩৫ হাজার টাকা দামেরও আছে।’
এ বছর শেরওয়ানি বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১ ডিসেম্বর থেকে বিক্রি শুরু হয়। মার্চ মাস পর্যন্ত এই বিক্রি থাকে। তবে এবার ১০ ডিসেম্বর রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় ১ ডিসেম্বরের পর বেচাকেনা একেবারেই বন্ধ ছিল।’
ওই অবস্থার এখনো যে খুব বেশি উন্নতি হয়েছে তা নয়। বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক সংকট আছে। সবকিছুর দাম বাড়ায় এবার শেরওয়ানি বিক্রিতেও কমতি দেখা যাচ্ছে।