আজ দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কার্যক্রম শুরু উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি। কম খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা সেবা পেয়ে রোগিরা খুশি।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী রোগী প্রতি অধ্যাপক ৫০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক ৪০০ টাকা ও কনসালটেন্টরা ৩০০ টাকা হারে ফি নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৫০ টাকা চিকিৎসাসেবায় সহায়তাকারী ও ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাবেন। শুধু রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র নয়, প্রয়োজনে সার্জারি সেবা ও পরীক্ষা-নিীরীক্ষাও এই কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
বাসসের জেলা সংবাদদাতারা জানান-
কুড়িগ্রাম: ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু হয়েছে। এ উপলক্ষে কুড়িগ্রাম ডক্টরস ক্লাবে আয়েঅজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. এবিএম আবু হানিফ, কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিনহাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর ই মুর্শেদ, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ, বিএমএর সভাপতি ডা. নাসির উদ্দিন প্রমুখ। সাপ্তাহিক ছুটি ব্যতিত প্রতিদিন বিকাল-৬টা থেকে এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে রোগীদের সেবা দিবেন। প্রথম দিনে এই হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. গোলাম ফারুক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মাইনুদ্দিন, পেড্রিয়াটিক কনসালটেন্ট ডা. আল আমিন মাসুদ, গাইনি কলসালটেন্ট ডা. নাসিমা আখতার ও সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. নাসের আল মজুমদার রোগী দেখেন। প্রথম দিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুরের সোনা মিয়া ও রাজারহাটের বালাকান্দি গ্রামের বিজলী বেগম জানান, অনেক কম খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা সেবা পেয়ে তারা আনন্দিত। এই সেবা যেন চলমান থাকে এই দাবী করেন তারা। রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. এবিএম আবু হানিফ জানান, সরকারের এই নতুন উদ্যোগে চিকিৎসকসহ সবার মতামত রয়েছে। এখন জনগনের সাড়া পাওয়া গেলে এই সেবা আরো বিস্তৃতত হবে।
খাগড়াছড়ি: জেলা সদর হাসপাতালে বৈকালিক প্র্যাকটিসের উদ্বোধনের পর-পর বিকেল ৩টায় জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসকরা রোগী দেখা শুরু করেন। বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে রোগীদের চিকিৎসা নেয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে প্রথমদিনে রোগীর সংখ্যা কম ছিল। হাসপাতালে তুলনামূলক কম ফি দিয়ে সেবা পাওয়ায় খুশি রোগী ও স্বজনরা। বিশেষেজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে আসা রোগী মো. সালে আহন্মদ, শেফালী ত্রিপুরা ও অমিত চাকমা বলেন আগে বাইরে প্রাইভেট ক্লিনিকে দেখাতে গেলে ডাক্তারের ফি ছিল ৫০০ টাকা। এখন ৩০০ টাকা দিয়ে দেখাতে পারছি। এটি আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। সদর হাসপাতালের বিশেষেজ্ঞ চিকিৎসক ডা. হমেদ কোরাইশী ও ডা. সুবল জ্যোতি চাকমা জানান সরকারি নির্দেশনা মেনে বিকেলে রোগীদের সেবা দিচ্ছে চিকিৎসকরা। তারা বলছে, এতে রোগীরা কম খরচে সেবা নিতে পারবে ।
নীলফামারী: জেলার ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৈকালিক বিশেষ স্বাস্থ্য সেবার শুভ সূচনা হয়েছে। বিকেলে এই সেবার উদ্বোধন করেন সিভিল সার্জন মো. হাসিবুর রহমান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রায়হান বারীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এইচ এম রেজওয়ানুল কবির, কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবু সফি মাহমুদ, ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্ত্রী রোগ ও প্রসুতি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারজানা আফরিন, ডোমার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম রৌশন কানিজ প্রমুখ। উদ্বোধনের পর প্রথম সেবাগ্রহিতা ছিলেন বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের বটতলি বাজার এলাকার সুজন রায় (২০)। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পেয়ে তিনি খুশি হয়ে বলেন,‘আমার গাল ও গলা ফুলে যাওয়ায় ভীষণ ব্যথা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় অসময়ে হাসপাতালে ডাক্তার পেলাম। ২০০ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে। এ ব্যবস্থা চালু থাকলে এলাকার সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার এ সেবা চালু হলে ১৪ জন রোগি চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। বিভিন্ন রোগ নির্নয়ের পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন ছয় জন। সিভিল সার্জন মো. হাসিবুর রহমান বলেন,‘কোন সেবার কত ফি সেটা সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। সকলের সুবিধার্থে সে তালিকা টানানো হয়েছে। প্রথমদিনে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। বিষয়টির প্রচার প্রচারণা হলে রোগির সংখ্যা বাড়বে।’
যশোর: জেলার কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাইলট প্রকল্প হিসেবে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার আলহাজ ডাক্তার আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে ফিতা কেটে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা সাদেক ও কেশবপুর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস আর সাঈদ। অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সমরেশ কুমার দত্ত, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার সৌমেন বিশ্বাস, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নাজিয়া নওরিন জিসান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার আলমগীর হোসেন জানান, আজ থেকে সপ্তাহে দুইদিন চিকিৎসকরা বৈকালিক চেম্বারে বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন সরকার নির্ধারিত ফিসে। তবে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হতে কোন সরকারি ওষুধ সরবরাহ করা হবে না। তিনি সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবার কারণে যত্র-তত্র গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের দৌরাত্ব্য কমবে। স্বাস্থ্য সেবা সাধারণ মানুষ নাগালের মধ্যে থাকবে। উদ্বোধনের পূর্বে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসের নেতৃত্বে একটি টিম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বৈকালিক চেম্বার পরিদর্শন করেন।
কুমিল্লা: জেলার দাউদকান্দি উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিকেলে সরকারি চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আক্তার, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী এবং দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদুল হাসান এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকবৃন্দ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রাথমিক পর্যায়ে জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সরকারি চিকিৎসকগণ পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত ভিজিটে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। সূত্রঃ বাসস