গাজীপুরে বেড়েই চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যু হারও। করোনা রোগীদের চাপ বেড়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার হাসপাতালটিতে করোনা ইউনিটে ধারণক্ষমতার দেড়গুণ রোগী ভর্তি করা হয়। ইউনিটের ভেতরে জায়গা না হওয়ায় অনেক রোগীকে ভর্তি করে বারান্দায় রাখা হয়েছে।
গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরও ২৪৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে মোট ৫৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার অনুপাতে শণাক্তের হার ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ। তার আগের গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার সংক্রমণের হার ছিল ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ। ওই দিন করোনা শনাক্তের জন্য ৬৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে করোনা রোগীর সিট আছে ১০০ জনের। আইসিইউ আছে ৮টি। গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ৫৬ জন এবং উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি হন ১০৩ জন রোগী। শুক্রবার ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন ৩৭ জন। বিপরীতে হাসাপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হন ১৬৭ জন। এদের মধ্যে ৮ জনকে আইসিইউ এবং ৯৬ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এদিন ১০০ জনের জায়গায় ভর্তি আছেন ১৬৭ রোগী। ফলে বাড়তি রোগীদের জীবন বাঁচাতে বারান্দায় জায়গা করে দিতে হচ্ছে।
ডা. রফিকুল ইসলাম আরও জানান, গত বুধবার হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ১৪৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী হিসেবে ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে আটজন ছিলেন আইসিইউতে। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ছিলেন ১০৩ জন রোগী। তাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার মারা গেছেন ৮ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ ও সাতজন আইসোলেশনে ছিলেন। শুক্রবার আইসিইউতে একজন এবং আইসোলেশনে চারজন মারা গেছেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে ১০০ করোনা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করার মতো সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সেখানে দেড়গুণের বেশি রোগী ভর্তি করা হয়েছে। অনেক রোগীকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের আমরা অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে চিকিসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। সক্ষমতার বেশি রোগীকে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
ডা. হাফিজ উদ্দিন বলেন, এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ছয় হাজার লিটারের একটি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্লান্টের ব্যবস্থা রয়েছে। এটি দিয়ে ১০০ জন করোনা রোগীর অক্সিজেন চাহিদা মেটানো সম্ভব। তা ছাড়া ৪৫৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। যার তিন ভাগের একভাগ রোগীদের সেবায় ব্যবহার করা যায়। বাকি দুই ভাগের একভাগ রিফিল করতে ও আনা-নেওয়ার জন্য হাসপাতালের বাইরে থাকে। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। রোগীর চাপ আরও বাড়লে পরিস্থিতি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
এ সময় হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, আমাদের সবার স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিত। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। করোনা আক্রান্তের চেয়ে উপসর্গ নিয়ে বেশি রোগী কেন মারা যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপসর্গ নিয়ে রোগীরা বাড়িতে বসে থাকেন। যখন শ^াসকষ্ট বেড়ে যায়, অবস্থা বেশি খারাপ হয়, তখন তারা হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালে আসার পর কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরুর জন্য আমরা বেশি সময় পাই না। এ জন্য প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালে আসা উচিত।