তিনি বলেন, “৭ অগাস্ট থেকে ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। দেশের ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সব জায়গায় এই টিকা উৎসব চলবে।”
গত এক দিনে দেশে প্রায় তিন লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। আট দিনে ১ কোটি মানুষকে টিকা দিতে দিনে ১২ লাখের বেশি ডোজ প্রয়োগ করতে হবে।
করোনাভাইরাস মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে সরকার ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
এরপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা সময়মতো না পাওয়ায় তার গতি ব্যাহত হয়।
উন্নয়নশীল বিশ্বে টিকাদান পর্যবেক্ষণে আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্সের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোভিড-১৯ টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
ভারত থেকে টিকা না আসায় চীন থেকে টিকা কিনছে সরকার। পাশাপাশি টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে শুরু করেছে।
এসব টিকা পাওয়ার পর বাংলাদেশ এখন ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদেরও টিকা দেওয়া শুরু করেছে। শহর ছাড়িয়ে ৭ অগাস্ট থেকে গ্রামেও টিকাদান শুরু করতে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. শামসুল হক রোববার জানান, আগামী ৭ অগাস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সব জায়গায় এই টিকা উৎসব চলবে।”
সপ্তাহব্যাপী এই টিকাদান কর্মসূচিতে বয়স্ক মানুষদের অগ্রাধিকার দিয়ে তারপর অন্যদেরও টিকা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্করা। বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যে ২১ হাজার জন মারা গেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশের বয়সই ৬০ বছরের বেশি।
শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সরকারি অ্যাপ সুরক্ষায় নিবন্ধন করতে হচ্ছে। তবে বেশি মানুষকে টিকা দিতে এই প্রক্রিয়া সহজ করার কথা বলেছেন জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, “বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে কেবল এনআইডি অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টিকা দেওয়া হবে।”
জার জনকে কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৪০ হাজার।
বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটিরই দুটি ডোজ নিতে হয়।
টাস্ক ফোর্স বলছে, বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা।
বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে, তাতে এই বছর নাগাদ ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভবপর হবে বলে টাস্ক ফোর্সের অনুমান।
আগামী বছরের শুরুতে দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ২১ কোটি ডোজ টিকা আসার সম্ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
কোভ্যাক্সের আওতায় জাপান থেকে পাওয়া ২ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ ডোজ অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকা শনিবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, চীন থেকে ৩ কোটি, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি, ৭ কোটি ডোজ কোভ্যাক্স থেকে, ১ কোটি রাশিয়ার, জনসন অ্যান্ড জনসনের ৭ কোটি ডোজ মিলিয়ে মোট প্রায় ২১ কোটি ডোজ টিকা আসবে।
কোভ্যাক্স থেকে ৬ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের।
টাস্ক ফোর্সের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সাত দিনের গড়ে দৈনিক টিকাদানের হার শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে দিনে টিকা পাচ্ছে শূন্য দশমিক ১১ জন।
যদি এই বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকাদান সম্পন্ন করতে হয়, তবে বাংলাদেশকে দিনে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ হারে টিকা দিতে হবে।
আর ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে হলে দিনে শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ হারে টিকা দিতে হবে।