ঢাকায় পুলিশ হেফাজতে ট্রাকচালকের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বগুড়ায় লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেছে ট্রাকশ্রমিকরা।
বগুড়া আন্তঃজেলা ট্রাক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে বুধবার দুপুরে শহরের ভবের বাজার এলাকায় বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। মৃত ট্রাকচালক লিটন প্রামাণিকের (৪৫) লাশ নিয়ে সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় ওই মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাকসহ সবধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় তাৎক্ষণিক আয়োজিত সমাবেশে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পুলিশ হেফাজতে চালক লিটনের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ উল্লেখ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ সময় বক্তারা বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সমাবেশে বগুড়া জেলা ট্রাকমালিক সমিতি, মোটরমালিক গ্রুপ এবং মোটরশ্রমিক ইউনিয়নসহ পরিবহন সেক্টরের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
সমাবেশে আন্তঃজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের বগুড়ার সভাপতি আব্দুল মান্নান মন্ডল অভিযোগ করেন, বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাল্লাপাড়া গ্রামের সোলায়মান প্রামাণিকের ছেলে লিটন প্রামাণিক (৪৫) পেশায় একজন ট্রাকচালক এবং তাদের সংগঠনের সদস্য। লিটন প্রমাণিক তার ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো-ড-২৪-২৫৬৩) গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে চাল নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলায় সরকারি গুদামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে তিনি তার ট্রাকটিকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে একটি দোকানে যায়। সেখান থেকে র্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় সোপর্দ করে।
আব্দুল মান্নান মন্ডল বলেন, ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানায় ৩১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত আটক অবস্থায় লিটনকে পুলিশী নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু পরদিন ৩ আগস্ট দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের খবরে ওই ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় জাড়িত ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অপসারণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন তাহলে আমরা দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো। এজন্য পরিবহন সেক্টরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে তার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান আকন্দ, বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, বগুড়া মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল হামিদ মিটুল ও আন্তঃজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিল।
এসময় পুলিশ বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়। পরে গ্রামের বাড়ি কাহালু উপজেলায় লিটনের লাশ দাফন করা হয়।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজা বলেছেন, শ্রমিকনেতাদের সাথে আলোচনা করে এক ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যহার করা হয়। মৃত লিটনের নামে কাহালু থানাসহ ঢাকা ও চট্রগ্রামে চারটি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।