প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী দিনে গতকাল শনিবার এ কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। তবে 'গণচাপ' সামাল দিতে না পারায় অধিকাংশ টিকাকেন্দ্রেই 'গণবিশৃঙ্খলা' তৈরি হয়। সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও কোথাও কোথাও শুরুর এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই টিকা শেষ হয়ে যায়। আবার একেকটি কেন্দ্রে সাড়ে তিনশ থেকে ছয়শ টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও অতিরিক্ত তিন থেকে চারগুণ মানুষ ভিড় করেন। নিবন্ধন ছাড়া টিকা পাওয়ার সুযোগ থাকায় অনেকে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে যান। আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই এমন মানুষও কেন্দ্রে ভিড় করেন। সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন, তবে টিকা দেওয়ার এসএমএস পাননি, এমন অনেকেও ভিড় করেন। উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে অনেক জায়গায় ভোটকেন্দ্রের মতো লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকা দিয়েও বিশৃঙ্খলা ঠেকানো যায়নি। অভিযোগ ওঠে স্বজনপ্রীতি করারও। কেন্দ্রে সংশ্নিষ্টদের অব্যবস্থাপনা, গণচাপসহ সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যায়। ছয় দিনব্যাপী এ ক্যাম্পেইনে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গতকাল প্রথম দিনে ২৭ লাখের বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন।
গণটিকা দেওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ায় করোনার উচ্চ সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, এ ধরনের কার্যক্রম শুরুর আগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ তা করেনি। ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী সবাইকে টিকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একেকটি ওয়ার্ডে কয়েক হাজার মানুষ বাস করে। তবে সেখানে তিনশ টিকা বিতরণ করা হলে ভিড় বাড়বেই। সুতরাং এক্ষেত্রে কোন শ্রেণির মানুষকে কবে টিকা দেওয়া হবে, তা এলাকাভিত্তিক প্রচার করা হলে বিশৃঙ্খলা এড়ানো যেত।
স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকা নিয়ে শুরুতে মানুষের মধ্যে যে ভীতি ছিল তা কেটে গেছে। ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকাকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় প্রমাণ করে সারাদেশে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামে টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। প্রথম দিন যেসব ভুল-ত্রুটি হয়েছে, সেগুলো সংশোধন করে পরবর্তী সময়ে কর্মসূচি আরও বেগবান করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত একযোগে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে মানুষের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। ভবিষ্যতে ব্যাপকসংখ্যক মানুষকে দ্রুততম সময়ে টিকার আওতায় আনতে হলে এ ধরনের কার্যক্রম চালাতে হবে। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য বিভাগের কতোটুকু সক্ষমতা রয়েছে তা যাচাই করতেই সারাদেশে ছয় দিনব্যাপী এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে। এ হিসাবে প্রথম দিনের টিকাদানে আমরা সফল। মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়েছে, এটি সত্য। তবে আগামীতে যাতে এটি না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া হবে।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, বিশৃঙ্খলা: রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনের মিন্টু সরণি সংলগ্ন ২১ নম্বর সড়কের সূর্যের হাসি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। সকাল ৭টা থেকেই সেখানে নানা বয়সী নারী-পুরুষ জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল ৯টায় যখন শুরু হয় কার্যক্রম, তখন সেখানে হাজার দুয়েক নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে গেছেন। কে কার আগে টিকা নেবেন, শুরু হয়ে যায় সেই প্রতিযোগিতা। পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবী চেষ্টা করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে সেখানে হাজির হন স্থানীয় কাউন্সিলর জামাল মোস্তফা। তার নির্দেশনায় দুটি লাইন করে দেওয়া হয়। নারী-পুরুষের পৃথক লাইন করার পর কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসে। ওই দুই লাইনেই টিকা গ্রহণে ইচ্ছুকের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি ছিল।
জামাল মোস্তফা বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে তাদের জানানো হয়েছে, সাড়ে তিনশ জনের টিকা দেওয়া হবে। যারা টিকা দেবেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলে জানলাম এর বেশি টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। পরে দুই লাইনে শ পাঁচেক নারী-পুরুষকে রেখে পরদিন আসার জন্য বাকিদের চলে যেতে বলেছি। কারণ, ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলে বিশৃঙ্খলাই বাড়বে।
দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, কিছু স্বেচ্ছাসেবক শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত। তারপরও সেখানে টিকা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ হাজির হচ্ছেন। তাদের পরদিন যেতে বলা হচ্ছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ২টার মধ্যেই গণটিকা দেওয়ার প্রথম দিনের নির্ধারিত ডোজ শেষ হয়ে যায়। অনেকে টিকা না পেয়ে ফিরে যান। অনেককে আগাম রেজিস্ট্রেশন কার্ড দিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। বলা হয়, তারা পরবর্তী সময়ে টিকা নিতে পারবেন।
রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেরই চিত্র একই। অনেক কেন্দ্রে দেখা গেছে, নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, কাউন্সিলর ও তার অনুসারীরা কেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চিত্র কোথাও পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রগুলোতে নারী-পুরুষরা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির হন। দায়িত্বরতরা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, বয়স, নামসহ কয়েকটি তথ্য টিকা কার্ডে উল্লেখ করে একটি কার্ড দিয়ে দিচ্ছেন। সেটা দেখালে টিকা দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর রোকেয়া সরণির পূর্ব শেওড়াপাড়ার মারডি গ্রাস কনভেনশন হলে আয়োজন করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের টিকাদান কর্মসূচি। সকাল পৌনে ১০টার দিকে দেখা যায়, নারী-পুরুষের লাইন ফুটপাতে একশ গজ দীর্ঘ হয়েছে। দুই যুবক জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে টিকাকার্ডে তথ্য লিখে দিচ্ছেন। দু'জন টিকা দিচ্ছেন। অন্যরা ভিড় সামলাতে ব্যস্ত। কেন্দ্রটির শৃঙ্খলা রক্ষার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী বলেন, নারী-পুরুষের জন্য দুটি পৃথক বুথ করা হয়েছে। প্রতি বুথে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী টিকা দেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, সকাল ১১টা পর্যন্ত তারা শতাধিক ব্যক্তিকে টিকা দিতে পেরেছেন।
টিকাদান কার্যক্রমের সার্বিক দায়িত্ব পালনকারী সূর্যের হাসি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তা রনি আহমেদ জানান, তাদের সাড়ে তিনশর মতো টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে মানুষের চাপ সামলানো যাচ্ছে না। এ জন্য যারা আসছেন, তাদের রেজিস্ট্রেশনটা করে রাখা হচ্ছে। পরবর্তী দিনে তাদের টিকা দেওয়া হবে।
দুপুরে দেখা যায়, কেন্দ্রটি থেকে প্রায় ২০০ গজ দীর্ঘ হয়ে পড়েছে টিকা নিতে ইচ্ছুকদের লাইন। যারা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দেওয়ার তারিখ পাননি, তারাও কেন্দ্রটিতে হাজির হচ্ছেন। এ রকম কয়েকজনকে টিকা দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে প্রথমে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে তাদেরও টিকা দেওয়া হয়।
কাজীপাড়া থেকে টিকা নিতে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি সকাল ৯টার আগেই এসেছেন। তিন ঘণ্টা পর তার ভাগ্যে টিকা জুটেছে। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ফিরে যান। আজিমপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সেখানেও নারী-পুরুষের ভিড়। দীর্ঘ লাইন ধরে মানুষজন টিকা নিচ্ছেন। গণটিকাদান সম্পর্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক জানান, প্রথম দিন এ ওয়ার্ডে ৩০০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সবাই যেন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা নিতে পারেন, সেটিও চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকার বাইরেও একই চিত্র: খুলনা ও ফুলতলা প্রতিনিধি জানান, প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। ফলে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না কোথাও। নারী ও বৃদ্ধদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রেই তা মানা হয়নি। কেন্দ্রগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের টিকা দিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ ছিল প্রতিটি কেন্দ্রেই। সকাল ৮টায় কেন্দ্রে গিয়েও ফেরত এসেছেন অনেকে। এ রকম নানা বিশৃঙ্খল পরিবেশে গণটিকা ক্যাম্পেইনের প্রথম দিন কেটেছে খুলনায়।
পছন্দের ব্যক্তিদের ডেকে টিকা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন নগরীর শেখপাড়া বাজার এলাকার তারা বেগম। রঞ্জনা রহমান নামের ৫৫ বছর বয়সী এক নারী বলেন, 'বৃদ্ধদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা শুনে সাড়ে ১১টায় এসেছি। কিন্তু কেউ ঢুকতে দিচ্ছে না।' পরে টিকা না নিয়েই ফিরে যান তিনি।
কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, শেষ পর্যন্ত টিকা নিতে পারিনি। বলা হলো টিকা শেষ হয়ে গেছে। ফুলতলায়ও দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করে অনেককেই টিকা ছাড়া বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রতিবেদক জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অত্যধিক মানুষের সমাগম ঘটায় প্রতিটি কেন্দ্রেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়ে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই টিকা না নিয়ে ফিরে গেছেন। কসবার বিভিন্ন কেন্দ্রে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। সৈয়দাবাদ কেন্দ্রে হানিফ, সোহাব্বিরসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, স্বজনপ্রীতি করে টিকা দেওয়া হয়। এ সময় সেবাদাতাদের সঙ্গে টিকা নিতে ইচ্ছুকদের কয়েকবার ঝগড়া লাগে।
নাটোর ও বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, নাটোরে মানুষ স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। তবে বড়াইগ্রামে টিকা না পেয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরে যান। বনপাড়া কেন্দ্রে আনোয়ার হোসেন নামে একজন বলেন, কেন্দ্রে অনেক ভিড় ছিল। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত টিকা পাইনি।
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সাটুরিয়ার হরগজ ইউনিয়নে টিকা না দেওয়ায় ফুঁসে উঠেছে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ। টিকা দেওয়া হয়েছে ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ফলে টিকা না পেয়ে ফিরে গেছে ৬ শতাধিক মানুষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মামুন উর রশিদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এছাড়া টিকা প্রদানে বাধা দেওয়ায় সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক স্বাস্থ্য সহকারী।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে গণটিকায় আগ্রহ দেখা গেছে। প্রথম দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে মানুষের ভিড় ছিল। তবে দু-চারটি কেন্দ্রে ছন্দপতন ঘটায় অনেককেই টিকা না নিয়ে ফেরত যেতে হয়েছে। সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত চাপ হওয়ায় অনেককেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা পর্যায়ক্রমে টিকা পাবেন।
রংপুরের পীরগঞ্জে রায়পুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের আলেফ উদ্দিনের (৮০) টিকা নেওয়ার পর মৃত্যুর অভিযোগ তোলেন পরিবারের সদস্যরা। পাবনার ভাঙ্গুড়ায় টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে মফিজুর রহমান খন্দকার (৫২) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া যায়। ভাঙ্গুড়ার খানমরিচ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, লক্ষ্মীপুর, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লার বুড়িচং, ফরিদপুরের মধুখালী, বরিশাল, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের পটিয়ায়ও নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্য মানা হয়নি। অনেকে মাস্ক পরেননি। টিকা না পেয়ে ফিরে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক। এর বাইরে অন্যান্য এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম দিনের টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
কোথায় কীভাবে মিলবে টিকা: ছয় দিনের ক্যাম্পেইনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাম্পেইনের আওতায় এক কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে টিকা সংকটের কারণে তা কমিয়ে ৩২ লাখ করা হয়। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টিকাদান চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। সারাদেশে চার হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ক্যাম্পেইনের আওতায় ১৫ হাজারের বেশি কেন্দ্রের মাধ্যমে এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি চলছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে দিনে ৬০০ ডোজ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের প্রত্যেকটি কেন্দ্রে দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ ডোজ করে টিকা দেওয়া হবে।
রোডম্যাপী অনুযায়ী, গতকাল দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার ইউনিয়নের যেসব ওয়ার্ডে গতকাল টিকাদান চালু ছিল, সেসব ওয়ার্ড ও পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হবে। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় আগামীকাল পর্যন্ত টানা তিন দিন টিকাদান চলবে। আজ এবং কাল দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় টিকাদান কার্যক্রম চলবে। আগামী মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার ৫৫ বছরের বেশি বয়সী রোহিঙ্গাদের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম চালানো হবে। টিকা কার্যক্রমে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী ও ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত করা হয়েছে।