করোনার টিকা গ্রহণে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করায় সারাদেশের থানা নির্বাচন অফিসগুলোতে নতুন ভোটারের চাপ বাড়ছে। এতে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা।
এদিকে, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনেও নতুন ভোটারের কার্যক্রম চালু রেখেছে ইসি। তবে করোনায় তাদের বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছেন।
ইসি জানায়, এ পর্যন্ত তাদের ২১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আর মারা গেছেন ৯ জন। সর্বশেষ গতকাল রোববার মারা গেছেন তাজুল ইসলাম নামের এক অফিস সহকারী। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত ছিলেন তিনি। আক্রান্তদের মধ্যে অবশ্য ১২৯ জন সুস্থ হয়েছেন।
ইসির হিসাবে প্রতিদিন নতুন ভোটারের জন্য দুই হাজারের মতো অনলাইনে আবেদন জমা পড়ছে। আবেদন করার পর সরাসরি সংশ্নিষ্ট থানা অফিসে গিয়ে ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ দিয়ে এনআইডি নম্বর পাচ্ছেন। পাশাপাশি ভোটারের ঠিকানা পরিবর্তন ও এনআইডির তথ্য সংশোধনের কাজও চলছে। ইসি-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে এনআইডি-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ইসি সচিবালয় জানায়, করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৩ আগস্ট মারা যান নির্বাচন কর্মকর্তা এ বি এম সাইফুজ্জামান। তিনি ময়মনসিংহের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন। গত ২৫ জুলাই সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক এনামুল হকও করোনাভাইরাসে মারা যান। এ ছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার সাবেক উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইবুর ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের অফিস সহায়ক বাবলুর করিম, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা আলিফ লায়লা, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউর রহমান ও পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সাবেক অফিস সহায়ক শহিদুল ইসলাম মারা যান।
ইসির এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী গত ২ মার্চ সারাদেশে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় চলা লকডাউনের মধ্যেই ৩ মার্চ থেকে নতুন ভোটার তালিকাভুক্তির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
গত ৩ মার্চ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত তিন লাখ ২১ হাজার মানুষ ভোটার হতে আবেদন করেন। এ সময়ে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেওয়া ও ফিঙ্গার ম্যাচিং কার্যক্রম শেষ করে ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছেন এক লাখ ৪১ হাজার চারজন।
ভোটার হওয়ার শর্ত হিসেবে তারা সবাই ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার প্যাডে ১০ আঙুলের ছাপ দিয়েছেন এবং আইরিশ স্ক্যানারে তাদের চোখ রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কর্মকর্তা, অফিস সহকারী ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের সঙ্গে নতুন ভোটারদের সংস্পর্শে এসেছেন।
বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, টিকা কার্যক্রম শুরুর পর থেকে নতুন ভোটার হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এসব ব্যক্তি যখন নির্বাচন অফিসগুলোতে ছবি তোলাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিতে আসছেন, তখন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সংস্পর্শে চলে এসেছেন। এ ক্ষেত্রে ইচ্ছা থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি সব সময় মানা সম্ভব হয়নি।
খুলনা জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম মাজহারুল ইসলাম জানান, ৩ মার্চ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত শুধু খুলনা জেলায় দুই হাজার ৪৫৮ জন ভোটার হতে আবেদন করেছেন। ভোটার করা হয়েছে এক হাজার ৪৪৩ জনকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনু বিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ নিয়েই তারা এনআইডি সেবা দিতে জনগণের পাশে রয়েছেন।