আজ শুক্রবার রাজধানীতে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে এক র্যালিপূর্ব লাখো জনতার সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। বিএনপি ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
তারেক রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতা প্রিয় জনগণকে আমি একটি বিষয় আবারো স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সতর্ক থাকতে চাই। সেটি হলো গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো কিন্তু থেমে নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, শাসনে-প্রশাসনে এখনো সক্রিয়।’
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাযর্করি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটি আজ জনগণের চাওয়া। আসুন এই লক্ষ জনতার মিছিল যেন কোনভাবেই বৃথা না যায়। এই প্রত্যাশা রেখে এই মিছিলের সাফল্য কামনা করে এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের পতন হওয়ায় জনগণকে অভিনন্দনও জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিলো শত্রু-মিত্র চেনার দিন। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের শত্রু চিহ্নিত করার দিন। আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।’
ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর এই র্যালী জনসমুদ্রে রুপ নেয়। বিকাল ৪টায় নয়া পল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরার মোড় থেকে শুরু হওয়া র্যালিটি কাকরাইল মোড়-কাকরাইল মসজিদ-মৎস্য ভবন-ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-শাহবাগ-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-বাংলামোটর-কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মজিবুর রহমান সারোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মীর নেওয়াজ আলী, সাইফুল আলম নিরব, নিলোফার চৌধুরী মনি, তাইফুল ইসলাম টিপু, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, নিপুণ রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিকুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
বিএনপি ঘোষিত র্যালিতে অংশ নিতে শুক্রবার সকাল ১১টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা এবং ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। নগরীর মোড়ে মোড়ে, অলিগলিতে জমায়েত হয়ে ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া লও লও, লও সালাম’, ‘গণতন্ত্রের অপর নাম জিয়াউর রহমান’, ‘স্বাধীনতার অপর নাম জিয়াউর রহমান’, ‘দেশ গড়েছেন শহীদ জিয়া, নেত্রীর মোদের খালেদা জিয়া’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’, ‘তারেক রহমানের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’- এসব স্লোগান দিয়ে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন তারা।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মতিঝিল থেকে ফকিরেরপুল-কাকরাইল ছাড়িয়ে মৎস্য ভবন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণের এই সমাবেশে জনসমুদ্রে রুপ নেয়। বিকাল ৪টায় নয়া পল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। র্যালিতে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়া ধানের শীষসহ, কৃষক সাজে নেতা-কর্মীরা র্যালিতে যোগ দেন এবং ঢাক-ঢোল, ট্রাক নিয়ে ও বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট পরে তারা র্যালিতে লিতে অংশ নেন। বর্নাঢ্য র্যালি নেতা-কর্মীদের হাতে ছিলো ধানের শীষের ছড়া এবং নানা রঙের পতাকা। ছিলো ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যার নানান দৃশ্য। র্যালিতে শেখ হাসিনাকে প্রতীকীভাবে খাঁচায় বন্দি করে উপস্থাপন করা হয়েছে। সরজমিনে দেখা গেছে, একটি খাঁচার মধ্যে গোলাপি রঙের শাড়ি ও চোখে সানগ্লাস পরে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবয়স্ক এক নারী। যার সাজগোজ অনেকটা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মতো। এই নারীর মুখম-ল সাজানো হয় দানবের মতো আর মাথায় ছিলো দুটি শিং। খাচার সঙ্গে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিভিন্ন অন্যায়-অত্যাচার আর লুটপাটের তথ্য ছিলো। বিভিন্ন পথ ধরে র্যালিটি চলার সময়ে রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ করতালি দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানায়। নেতৃবৃন্দ হাত তুলে সমবেত জনতার অভিবাদনের জবাব দেয়।
বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একটি খোলা ট্রাকে এই মিছিলে অংশ নেন। ঢাকা মহানগরের সকল ওয়ার্ডসহ মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদীসহ আশে-পাশের জেলাগুলো থেকে বাসে করে নেতা-কর্মীরা এই র্যালিতে অংশ নেয়। রাজধানী ছাড়াও বিভাগীয় শহরগুলোতে বর্ণাঢ্য র্যালির এই কর্মসূচি একযোগে আয়োজন করা হয়।
রাজধানী ছাড়াও বিভাগীয় শহরগুলোতে বর্ণাঢ্য র্যালির এই কর্মসূচি একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নয়াপল্টনে থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত কয়েকটি র্যালির আয়োজন করেছিলো পুলিশের অনুমতি নিয়ে। এই রুটের বাইরে এক যুগের বেশি সময় পরে এই প্রথম বিএনপি মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত র্যালি করলো। ৭ নভেম্বর বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সকালে শেরে বাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের আয়োজনে বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।