আজ শুক্রবার দু (৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার হতে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মিত শহিদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়ক টোল আদায় কার্যক্রম উদ্বোধনের আগে বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, যেন সারাদেশের মানুষ এবং আগামী প্রজন্ম জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করতে পারে। এই লক্ষ্যেই আজ চট্টগ্রামে আসা। চট্টগ্রামের মানুষ যে সংগ্রামে শামিল হয়েছেন, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের যেন পরবর্তী প্রজন্ম সবসময় স্মরণ করতে পারে সেজন্য আমরা আমাদের উদ্যোগ চালিয়ে যাবো।এ সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি এবং সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন শেষে প্রথম টোল দেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তারপর সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিমও টোল দিয়ে পার হন। ২০২৪ সালের অগাস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল শুরু করলেও এতদিন টোল আদায় করা হয়নি।
এরপর নগরীর পাঁচলাইশে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’ উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আদিলুর। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেন আর কখনোই ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে, আগামীদিনের প্রজন্ম যেন এ উদ্যানে এসে বা উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কথা মনে রাখতে পারেন, তাদের ত্যাগের কথা মনে রাখতে পারেন, সেই জন্যই মূলত উড়াল সেতু ও উদ্যানের উদ্বোধন।
তিনি বলেন, যারা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, সাড়ে ১৫ বছরের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, জীবন দিয়েছেন, তাদেরও একই সঙ্গে স্মরণ করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, শহিদদের নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না। শহিদরা শহিদ। শহিদদের তালিকা দেওয়া থাকবে। শহিদদের সম্মান দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার দৃশ্যমান করার কাজ মেয়র সাহেব করবেন। আন্ডারপাসও দরকার।
তিনি বলেন, উদ্যান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, কোনো গোষ্ঠির ব্যবহারের জন্য নয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় থাকা, যেন মানুষ যেতে পারে, সেই কাজগুলো আমরা চেষ্টা করছি। সবার সহযোগিতায় এটা বাস্তবায়িত হবে। বড় বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা। এটি আমাদের নজরে আছে। জলাবদ্ধতা থেকে যাতে মানুষ মুক্তি পায়, সেই চেষ্টা হচ্ছে। মেয়র, সিডিএ, ডিসি সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ হচ্ছে।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, পাঁচলাইশের ঐতিহ্যবাহী এই পার্কটি একসময় আমরা জাতিসংঘ পার্ক নামে চিনতাম। আমাদের শৈশব এখানে কেটেছে। এটি নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। আমি মনে করি এটার দায়িত্ব চসিক, সিডিএ, জেলা প্রশাসন, আমাদেরই নিতে হবে। একসময় আমাদের সমন্বয় ছিল না। এখন একসঙ্গে মিলে কাজ করছি। একসঙ্গে মিলে চট্টগ্রামকে সাজাতে চাই।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, যে চেতনা নিয়ে আমাদের এই জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের নয়জন বীর শহিদ প্রাণ দিয়েছেন, নতুন একটি গণতান্ত্রিক ইতিহাস লিখেছেন, তাদের সেই চেতনা আগামী প্রজন্মের কাছে যাতে তুলে ধরতে পারি, সরকার সেই কাজ করছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যেসব পার্ক অবৈধ দখলদারদের আওতায় রয়েছে তা উদ্ধার করা হবে। ইতিমধ্যে ডিসি পার্কের ১৯৪ একর জায়গা মাদকের আস্তানা থেকে রক্ষা করেছি। পতেঙ্গা বিচ মাঝখানে জৌলুস হারিয়েছিল। সেই জৌলুস ফিরিয়ে দিতে সিডিএ, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, টোল হার অনুসারে, পতেঙ্গা থেকে জিইসি পথে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অটো (তিন চাকা) ৩০ টাকা, প্রাইভেট কার ৮০ টাকা, জিপ ও মাইক্রেবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০ টাকা, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ টাকা ও কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা টোল দিয়ে চলাচল করতে হবে।
যেহেতু এখনো এই উড়াল সড়কে কোনো র্যাম্প চালু হয়নি তাই প্রাথমিকভাবে ধার্যকৃত টোল হারই প্রযোজ্য হবে বলে জানান সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
এডমিন যোগাযোগ-https://www.facebook.com/profile.php?id=61570080581049