রপ্তানির পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানির হিস্যাও কমেছে বাংলাদেশের। ২০১৯ সালে বিশ্বে যত পোশাক রপ্তানি হয়, তার মধ্যে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল বাংলাদেশি। গত বছর সেটি কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা গত বছর ৬ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তখন ভিয়েতনামের ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ১০ বছরের ব্যবধানে সেই ভিয়েতনামই টপকে গেল বাংলাদেশকে।
অবশ্য বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকেরা বলছেন, করোনার কারণে গত বছর প্রায় এক মাস পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। সে সময় পণ্য রপ্তানি হয়নি। অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। ফলে বন্ধের পর কারখানা খুললেও ক্রয়াদেশ কম ছিল। সে কারণে সহজেই ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারে। তবে চলতি বছর চিত্র আবার পাল্টে যাবে। কারণ, বর্তমানে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। অনেক কারখানা ২০১৯ সালের চেয়ে ৫-১০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বেশি পাচ্ছে।
ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীন সবচেয়ে বেশি ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তার আগের বছরের চেয়ে দেশটির পোশাক রপ্তানি ৭ শতাংশ কমেছে। তারপর চীন বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানি ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ দখলে রেখেছে। একক দেশ হিসেবে ভিয়েতনাম দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো সম্মিলিতভাবে এই জায়গা বহুদিন ধরেই দখল করে আছে। গত বছর ইইউর দেশগুলো নিজেদের অঞ্চলে ১২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। আর ইইউর বাইরে তাদের রপ্তানির পরিমাণ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।
এদিকে বাংলাদেশ যেমন ভিয়েতনামের কাছে জায়গা হারিয়েছে, তেমনি ভারতকে টপকে চতুর্থ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হয়েছে তুরস্ক। গত বছর ভারত ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার রপ্তানি করলেও তুরস্ক করেছে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের। যদিও ২০১৯ সালে ভারতের রপ্তানি ছিল ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। আর তুরস্কের ছিল ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
ডব্লিউটিওর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশ ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। সামগ্রিকভাবে তাদের রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ। ২০১৯ সালে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশের পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের। আবার গত বছর সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইইউভুক্ত দেশগুলো। দ্বিতীয় শীর্ষ যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক। তা ছাড়া জাপান ৩ হাজার ও যুক্তরাজ্য ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছে।
ভিয়েতনামের কাছে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান হারানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণের গত বছর এপ্রিলে প্রায় এক মাস আমাদের কারখানা বন্ধ ছিল। কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। ফলে আমরা কিন্তু ১১ মাস রপ্তানি করেছি। অন্যদিকে ভিয়েতনামের উদ্যোক্তাদের মহামারির কারণে গত বছর এক দিনের জন্যও কারখানা বন্ধ রাখতে হয়নি। ফলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে টপকে যাওয়া ভিয়েতনামের স্বাভাবিকই ছিল।’
ফজলুল হক আরও বলেন, ‘ভিয়েতনাম অবশ্যই বাংলাদেশি পোশাকশিল্পের জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বিপুল ক্রয়াদেশ আসছে। চলমান বিধিনিষেধে যে কয়েক দিন কারখানা বন্ধ ছিল, তাতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তাই আমার প্রত্যাশা, চলতি বছর আবার বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যেতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘ভিয়েতনামের কারখানাগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক রপ্তানি করে। আর আমরা করি বেসিক বা সস্তা পোশাক। ভিয়েতনামের কারখানাগুলো পেছনে মূলত বিনিয়োগ করেছে চীনারাই। আর সবাই জানে, পোশাক রপ্তানিতে চীন দৈত্যের মতো শক্তিশালী। দৈত্য যদি পেছনে থাকে, তাহলে শক্তি একটু বেশিই থাকে। সেই তুলনায় একক চেষ্টায় বাংলাদেশ ভালোই করছে।’
সূত্রঃ প্রথম আলো