বিএনপি আসতে চাইলে তাদের যেন পুলিশ বাধা না দেয়। বিশেষ করে বাংলামোটরে বাধা দেওয়া হত, সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে চাইলেও বিএনপিকে বাধা দেওয়া হবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি চা খাওয়াবেন, কথা বলতে চাইলে শুনবেন।
শনিবার বিকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “তারা সারাদিন এত কথা বলছে, আমি বলি বলুক, কারও না কারও তো কথা বলতে হবে। কথা যত পারুক বলুক, যদিও সারাদিন কথা বলে…, বলে আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না।
“মিছিল করে লোক হয় না, বলে আমাদের লোক আসতে দেওয়া হয় না। এই রকম অভিযোগ তো তারা করে। তাদের কাছে আসবে কেন? কোন আশায় আসবে? সেটা হলো বাস্তব কথা। সেটা তো চিন্তা করতে হবে।"
গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও করলেও পুলিশ বাধা দেবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি তো বলে দিয়েছি, তারা যদি, এমনকি প্রাইম মিনিস্টার অফিসও যদি ঘেরাও করতে আসে, তাদের পুলিশ যেন বাধা না দেয়।
"বিশেষ করে বাংলামোটরে বাধা দেওয়া হত, সেটা বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে যতদুর আসতে পারে আসুক। আমি চা খাওয়াব, বসাব, কথা বলতে চাইলে শুনব। আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।"
তবে সতর্ক করে তিনি বলেন, "যদি বোমাবাজি করে, ভাঙচুর করে, সেটা করলে বাধা দেব, সেটা করলে উপযুক্ত জবাব দেব, এটা বাস্তবতা। কিন্তু গণতান্ত্রিকভাবে করতে চাইলে কোনো অসুবিধা নেই। তারা তো আন্দোলন করেই যাচ্ছে।”
সমালোচকদের কাছে গত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শেখ হাসিনা।
“২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তাদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, বাংলাদেশে তিনশ সিটের মধ্যে সাংবাদিক বুাদ্ধিজীবী যারাই লেখেন, আমাদের জ্ঞানী-গুণী যারাই কথা বলেন। তারা কী একটা কথা চিন্তা করেন?
"তিনশত সিটে একটা দল যদি সাড়ে সাতশ নমিনেশন দেয়, সেখানে নির্বাচন কী করে হয়? পার্টি অফিস থেকে একজন দিচ্ছে, আবার আরেকজন লন্ডন বসে দিচ্ছে, গুলশান অফিস থেকে দিচ্ছে একজন। যারা এইভাবে নির্বাচন করেছে তারা জিতবে কী করে?
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নেতা কে হবেন এমন প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আপনারা বিএনপিকে জিজ্ঞাসা করেন, তাদের নেতা কে? ক্ষমতায় গেলে কাকে বসাবে?
"অর্থ আত্মসাৎকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরা কারবারি? ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী? হত্যাকারী? খুনি? এই হচ্ছে তাদের নেতা। বাংলাদেশে একটা মানুষ পায়নি তারা নেতা বানাবে?"
দলটির গঠনতন্ত্রের উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বিএনপির গঠনতন্ত্রের সাত অনুচ্ছেদে আছে, কেউ যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে দলের নেতা হতে পারবে না। কিন্তু বিএনপি তাই করছে।"
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির ক্ষমতায় থাকার সময়কাল স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "সন্ত্রাস দুর্নীতি-লুটপাট, মানি লন্ডারিং কী কাজটা না করেছে তারা?"
"বিএনপির দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংক বিদ্যুতে অর্থ বরাদ্ধ বন্ধ করে দিয়েছিল, যোগাযোগে অর্থ বরাদ্ধ বন্ধ করে দিয়েছিল। এটা কী সবাই ভুলে গেল?”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ফিরেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপির ক্ষমতার ২০০১ থেকে ৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
"আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এটা তো আমাদের বড় অর্জন, এটা কেউ দেখে না।"
তিনি বলেন, “বিএনপি সরকারের সময় সারের দাবি করায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, বিদ্যুতের দাবি করায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ আর পানির দাবি করায় সেখানে গিয়ে একজন তো দৌড়ে পালিয়েছেন।
"আজকে তাদের কাছ থেকে কথা শুনতে হয়। তখন বিদ্যুতের মন্ত্রী যিনি, তিনি আবার বড় বড় কথা বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুৎ দেওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে।"
ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "প্রাইভেট সেক্টর উন্মুক্ত করে দিয়েছি, প্রাইভেট সেক্টর উন্মুক্ত করে দিয়েছি বলেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, অর্থনীতিও চাঙা হয়েছে। একা সরকারের পক্ষে তো সম্ভব না।
"আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে সরকারি-বেসরকারি এবং কো-অপারেটিভের কথা। আমরা তো সংবিধান মেনেই চলছি। আমরা প্রাইভেটে দিয়েছি কারণ, যেন অনেক বেশি কর্মসংস্থান হয় এবং দেশ অনেক উন্নত হয়।"
সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, "প্রাইভেট বিদ্যুৎ দিয়েছি, এর জন্য সমালোচনা করেন? তাইলে এত টেলিভিশন যে অনুমোদন দিয়েছি, এসব নিয়ে তো কথা বলেন না।
"আজকে টেলিভিশন, বিমান, হেলিকপ্টার, পত্রিকা সব সেক্টর প্রাইভেটে উন্মুক্ত করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করেছি। আজকে মানুষের ভাগ্য কিভাবে পরিবর্তন হয়, কিভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় সেটা বিবেচ্য বিষয়।”
কৃষ্ণসাগর হয়ে খাদ্য সরবারহ পুনরায় চালু করতে তুরস্ক ও জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া এবং ইউক্রেইনের মধ্যে চুক্তি হওয়ায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
“তাদের উদ্যোগের ফলে, বিশেষ করে জাতিসংঘের মহাসচিবের উদ্যোগের ফলে এখন ইউক্রেন এবং রাশিয়া একটি চুক্তি করেছে সার, খাদ্যদ্রব্য এগুলো যেতে দেবে। কৃষ্ণসাগরে যে বন্দর বন্ধ রয়েছে, সেটাতে চলাচলের সুযোগ করে দেবে।
"খাদ্যদ্রব্য এখন আনা যাবে, কেনা যাবে। আমি মনে করি এটা আমাদের স্বস্তির বিষয়। এর মাধ্যমে খাদ্যের অভাব থাকবে না।"
গত মাসে দেশজুড়ে পরিচালিত জনশুমারিতে জনসংখ্যা খুব একটা বাড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, "১৬ কোটি ৫০ লক্ষ প্লাস। সামান্য কিছু হয়তো পরবর্তীতে বাড়বে বন্যা কবলিত এলাকা ধরে।
"কেউ আমাদের ১৮ কোটি বলে, ১৭ কোটি বলে, আমাদের কিন্তু এত জনসংখ্যা না। কাজেই এই মানুষগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করতে পারব। সবই পারব। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে সবই পারব।"
দেশে আবারও বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“সামনে বন্যা আসতে পারে এখন থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা, আষাঢ় মাস আসল, শ্রাবণের শেষে ভাদ্র মাসে পানি আসতে পারে। সবাই প্রস্তুত থাকবেন।”
এ সময় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, এ এইচম এম খায়রুজ্জামান লিটন, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল সোবহান গোলাপ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা ও মানব সম্পদ সম্পাদক সামসুন্নাহার চাঁপা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।