মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ভারত-পাকিস্তান পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা স্বৈরশাসন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে : সরকারের বিবৃতি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ত্যাগের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন  ৫ মে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন  ভলিবলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী চ্যাম্পিয়ন পৃথিবীর জন্য আশার বাতিঘর হতে চায় বাংলাদেশ সোনার দাম প্রতি ট্রয় আউন্স ৩,৪০০ ডলার ছাড়িয়ে – নতুন রেকর্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘সেরা নির্বাচন’ হবে: প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জনবল বাড়াবে সরকার ‘কুল-বিএসপিএ’ ২০২৪ সালের বর্ষসেরা মিরাজ ৫ অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস গাজায় ইসরায়েলের হামলায় বিশ্বজুড়ে পণ্য বয়কটে কার লাভ কার ক্ষতি বৈঠকে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইলো চিড়িয়াখানায় মানুষের ঢল শুক্রবারও খোলা থাকছে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রুপালী ব্যাংক জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক-বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল থেকে এ প্রমাণ সবার আগে বিশ্বকাপের টিকেট পেল জাপান সরকার প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে বাংলাসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ শিশু ধর্ষণের দায়ে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল নন-এমপিও শিক্ষকদের দাবি মেনে নিলো সরকার, আন্দোলন স্থগিত নিউজিল্যান্ডকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত ইফতার মাহফিল স্থগিত করলো বিএনপি অবসর ঘোষণা মুশফিকের বেগম খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন : ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ট্রিবিউনের প্রতিবেদন মিথ্যা প্রচারণার অংশ : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস জাতীয় শহীদ সেনা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালিত স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশমালা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে রুট নির্দেশনা ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাও’ স্লোগানে পদযাত্রা গণঅভ্যুত্থানের শহীদেরা ‘জুলাই শহীদ’, আহতরা ‘জুলাই যোদ্ধা’ স্বীকৃতি পাবেন : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা

‘আমি মরে গেলে তুমি শহিদের মায়ের সম্মান পাবে’: মাকে বলা শহিদ সাদ-এর শেষ কথা

স্বাধীনতা২৪.কম
  • Update Date : বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

“মা তুমি চিন্তা করো না, আমি মরে গেলে তোমাকে বীরের মা বলে ডাকবে, তুমি শহিদের মায়ের সম্মান পাবে। তোমাকে সবাই শ্রদ্ধা করবে”- পাঁচ আগস্ট দুপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মা বাধা দিলে একথা বলে বেরিয়ে যান সাদ। এটাই মায়ের সাথে সাদ-এর শেষ কথা।
ঢাকার ধামরাই পৌরসভার কায়েতপাড়া নিবাসী শফিকুল ইসলাম ও আঞ্জুমান আরার পুত্র আফিকুল ইসলাম সাদ। সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সাদ বড়।
সাদ-এর মা আঞ্জুমান আরা বাসস প্রতিবেদককে জানান, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মা আঞ্জুমান আরার সাথেই শেষ কথা হয় আফিকুল ইসলাম সাদের। বন্ধুদের সাথে দেখা করার কথা বলে মায়ের কাছ থেকে ২০টাকা চায় সে। মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েই বেরিয়ে পড়ে সাদ। তখন মা বারবার আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলে বলে, “মা, তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না, আমার অনেক বন্ধুরাও তো গেছে, আমার কিছু হয়ে গেলে বা মরে গেলে তোমাকে সবাই শহিদের মা, বীরের মা বলবে।” এর কিছুক্ষণ পরই সাভার উপজেলা ও থানার মধ্যবর্তী হার্ডিঞ্জ স্কুলের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আফিকুল ইসলাম সাদ।
আঞ্জুমান আরা বলেন, সাদ বের হওয়ার পরপরই আমার ছোট ছেলে সাজিদুলও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এরপরই কানে ভেসে আসে গোলাগুলির শব্দ। এলাকাবাসী বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় সাজিদুলকে।
সাজিদুলের কাছেই জানতে পারি সাদ আন্দোলনে গিয়েছে। বারবার ফোনে খোঁজ নিচ্ছিলাম। দুপুরে পরপর দু’বার কথাও হয়। তৃতীয়বার বেলা ৩টার দিকে ফোন দিলে আর ফোন রিসিভ করে না। তখনই মনের ভেতর কেমন যেন করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন আসে আমার কাছে। বলে, আন্টি আফিকুল তো মাথায় আঘাত পেয়েছে, ওকে আমরা সবাই স্থানীয় ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। অল্প পরে আবারও ফোন দিয়ে বলে, এখানে রাখেনি, আমরা ওকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, আপনারা চলে আসুন। তখন আমরা সবাই দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখি গুলিবিদ্ধ আমার ছেলে অচেতন হয়ে পড়ে আছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তখন দ্রুত তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩দিন পর ৮ আগস্ট সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সাদ।
সাদ এর মৃত্যুতে থমকে গেছে একটি পরিবারের স্বপ্নও। আদরের সন্তানের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না শহিদ সাদের বাবা-মা।
জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকেই সাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদী বিভিন্ন পোষ্ট দিয়ে নিজের সমর্থনের কথা জানান দেন। ৪ আগস্ট ফেসবুকে পোষ্ট করেন, “কুড বি এ নিউ রাইজ”। এরপর লেখেন, “যেই দেশের ইতিহাস রক্ত দিয়ে শুরু হয়েছে ওই ইতিহাস আবার লিখতে রক্তই লাগবে।”
সাদ-এর বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, “কোথা থেকে কি হয়ে গেলো! আমি হতবাক। আমার পুরো পরিবারটি এলোমেলো হয়ে গেলো। এ শোক কিভাবে কাটাবো আমরা। তিনি বলেন, আট তারিখ সকালে যখন চিকিৎসকরা বললো সাদ আর নেই, তখন আমি সাদের সামনে গিয়ে ওকে তিনবার বাবা বাবা বলে ডাকি, যদি মিরাকল কিছু হয়ে যায়। কিন্তু আমার বাবা আর উঠলো না। আমার ছেলেটা অত্যন্ত মেধাবী ছিল। পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। চাকুরির প্রতি আগ্রহ না থাকলেও বড় হয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন ছিল সাদ-এর। একটি বুলেটে সবকিছুই শেষ হয়ে গেলো।”
সাদ-এর বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পড়ার টেবিল, বিছানা, খেলার ট্রফিগুলো শোভা পাচ্ছে ঘরের আনাচে কানাচে। সবই আছে নেই শুধু সাদ। সকাল গড়িয়ে দুপুর, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, আজো যেন প্রতীক্ষায় বাবা-মা আর ভাই। তবু ফেরে না সাদ। ছেলেকে হারিয়ে এ্যালবামের ছবি, আলমারিতে রাখা খেলার ট্রফি’র মাঝেই মা আঞ্জুুমান আরা খুঁজে ফিরছেন নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেলের স্মৃতি। সাদ-এর অনুপস্থিতি মানতে পারছেন না বাবা শফিকুল ইসলাম কিংবা আদরের ছোট ভাই সাজিদুলও।
সাদ-এর ছোট ভাই সাজিদুল বলেন, “সাদ আমার বড় ভাই হলেও তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। আমাকে অনেক ভালোবাসতো সে। যে কোন কিছুই আমার সাথে শেয়ার করতো। আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেত। কেন যে আমাকে সেদিন সঙ্গে নিলো না, বুঝতে পারছি না। ভাইয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।”
তিনি বলেন, যেদিন দেশ থেকে সত্যিকারের বৈষম্য দূর হবে, সেইদিনই সার্থক হবে আমার ভাইয়ের আত্মত্যাগ।
সাদ-এর প্রতিবেশি ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি, ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে নিহত ভাগ্নের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন,  লেখাপড়ার পাশাপাশি সাদ অত্যন্ত ভালো ছেলে ছিল। সমাজের সকলের সাথে সুসম্পর্ক ছিল তার। তার ভালো ব্যবহারের জন্য মহল্লার সবাই তাকে স্নেহ করতো। সাদ-এর জন্য সকলের কাছে দোয়া চান তিনি।

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *