আজ বৃহস্পতিবার সুইডেনের স্থানীয় সময় বিকেল ১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টায় সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে স্থানীয় সময় সকাল ১টা ও বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫ টায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রয়্যাল সুইডশি একাডমেমি অফ সায়েন্সের স্থায়ী সচিব ম্যাটস মাল্ম ২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
একাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাকে পুরস্কার প্রদানের কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘তার ঐকান্তিক কাব্যিক গদ্য ঐতিহাসিক মর্মাঘাত সামনে নিয়ে আসে এবং মানব জীবনের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করে দেখায়।’
তার রচনায়, হান কাং ঐতিহাসিক অভিঘাত এবং অদৃশ্য নিয়মের মুখোমুখি হন এবং তার প্রতিটি কাজে মানব জীবনের ভঙ্গুরতা উন্মোচন করেন। দেহ ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে তার এক অনন্য সচেতনতা রয়েছে আর তার কাব্যিক ও নিরীক্ষামূলক শৈলী হয়ে উঠেছে সমসাময়িক গদ্যের উদ্ভাবন।
হান কাং ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার শহর গোয়াংজুতে জন্মগ্রহণ করেন। নয় বছর বয়সে তিনি তার পরিবারের সাথে সিউলে চলে আসেন। তিনি একটি সাহিত্যিক পরিবেশে জন্ম নেন। তার বাবাও একজন স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি নিজেকে শিল্প ও সঙ্গীতেও নিয়োজিত করেছেন। তার সমগ্র সাহিত্যিক সৃজনশীলতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
হান কাং ১৯৯৩ সালে ‘সাহিত্য ও সমাজ’ ম্যাগাজিনে এক গুচ্ছ কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে ছোট গল্প সংকলন ‘ইয়েসুর প্রেম’ প্রকাশ পায়। এর পরে তিনি অনেক অনন্য উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উপন্যাস ‘তোমার শীতল দু’টি হাত’।
হান কাংয়ের প্রধান আন্তর্জাতিক সাফল্য আসে ‘নিরামিষাশী’ উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর। এটি ২০০৭ সালে কোরীয় ভাষায় প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে এ উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য ভেজিটারিয়ান’ প্রকাশিত হয়। এটি তিন খণ্ডে লেখা।
তার অধিকতর প্লট-ভিত্তিক উপন্যাস হলো- ২০১০ সালে প্রকাশিত ‘বায়ু বয়, যাও’। এটি বন্ধুত্ব ও শৈল্পিকতা সম্পর্কে একটি বড় ও জটিল উপন্যাস, যেখানে দুঃখ ও রূপান্তরের আকাক্ষা দৃঢ়তার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
২০১১ সালে তার উপন্যাস গ্রীক পাঠ প্রকাশিত হয়। ২০২৩ সালে ইংরেজিতে অনূদিত হয় এটি। এটি দুই দুর্বল মানুষের মধ্যে একটি অসাধারণ সম্পর্কের মনোমুগ্ধকর চিত্রায়ন। বিভিন্ন ঘাতপ্রতিঘাতে বাকশক্তি হারানোর পথে থাকা এক যুবতী তার প্রাচীন গ্রিক ভাষার শিক্ষকের সাথে সম্পর্কে জড়ান, যিনি নিজেই তার দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছেন।
২০১৪ সালে তার ‘মানব বিধি-বিধান’ প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালে অনূদিত হয় এটি। ২০১৬ প্রকাশি হয় ‘সাদা বই’। এটি ২০১৭ সালে হোয়াইট বুক নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়। ২০২১ সালে প্রকাশিত হয় তার অরো একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা ‘উই ডু নট পার্ট'। এছাড়া তিনি আরো অনেক উল্লেখযোগ্য (কখনো বিদায় বলো না) ছোট গল্প সংকলন ও উপন্যাস লিখেছেন।
কথাশিল্পী হান কাং আজ প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। এটি পুরো এশিয়া মহাদেশের জন্যই আনন্দ সম্মান ও গৌরবের বিষয়।
জানামতে তার কোনো বই এখনো বাংলায় অনূদিত হয়নি। নিচে কোরিয়ান ভাষায় ও ইংরেজিতে প্রকাশিত তার কিছু উল্লেখযোগ্য বইয়ের সম্ভাব্য বাংলা নামের তালিকা দেওয়া হলো :
ইয়েসুর প্রেম ( ছোটগল্প, ১৯৯৫), কালো হরিণ (উপন্যাস, ১৯৯৮), শিশু বুদ্ধ (উপন্যাসিকা, ১৯৯৯), আমার নারীর ফল (ছোটগল্প, ২০০০), তোমার শীতল দুটি হাত ( উপন্যাস, ২০০২), আমার নাম সূর্যমুখী (উপন্যাসিকা, ২০০২), লাল ফুলের গল্প (উপন্যাসিকা, ২০০২), প্রেম ও প্রেম ঘেরা বিষয়-আশয় (প্রবন্ধ, ২০০৩), নিভৃতে গাওয়া গান (প্রবন্ধ, ২০০৭) বজ্র পরী, বিজলি পরী (শিশুতোষ রচনা, ২০০৭), নিরামিষাশী (উপন্যাস, ২০০৭) অশ্রুর ঝুড়ি (ছোটগল্প, ২০০৮), বায়ু বয়, যাও (উপন্যাস, ২০১০), গ্রীক পাঠ (উপন্যাস, ২০১১) হলদে চিতল শান্ডা (ছোটগল্প, ২০১২), দেরাজে সন্ধ্যা রাখি (কবিতা, ২০১৩) আরোগ্য (উপন্যাস, ২০১৩), মানব বিধি-বিধান (উপন্যাস, ২০১৪) সাদা বই (উপন্যাস, ২০১৬) কখনো বিদায় বলো না (উপন্যাস, ২০২১), হান কাং : নির্বাচিত সংগ্রহ (২০২২)
এর আগের বছর ২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান নরওয়ের লেখক ও নাট্যকার ইয়োন ফসে। ইয়োন ফসের লেখা নাটক ও সাহিত্যের প্রশংসা করে সুইডিশ একাডেমি বলেছে, তিনি তার লেখায় অনুচ্চারিত থেকে যাওয়া বহু কথা তুলে এনেছেন।
১৯০১ সালে, সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান ফরাসি কবি ও প্রাবন্ধিক সুলি প্রুদোম (১৮৩৯-১৯০৭)।
পুরস্কার ঘোষণার সব তথ্য নোবেলপ্রাইজের ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি দেখা যাবে। এ বছরের নোবেল পুরস্কারের সমস্ত ঘোষণা nobelprize.org ও নোবেল পুরস্কার কমিটির ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রথা অনুযায়ী অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার হিসেবে ৭ অক্টোবর চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
সোমবার যৌথভাবে দুই মার্কিন বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকানকে চিকিৎসাশাস্ত্র বা ওষুধশাস্ত্রে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কারজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্স জন জে. হপফিল্ড ও জিওফ্রে ই. হিন্টনকে যৌথভাবে ২০২৪ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
বুধবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড বেকারকে কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন’ এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিস ও জন এম. জাম্পারকে ‘প্রোটিন গঠন পূর্বাভাস’-এর জন্য যৌথভাবে ২০২৪ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কারজয়ী ঘোষণা করে।