সালমান শাহ [জন্ম ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১- মৃত্যু :৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬]
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে নানা চরিত্রে অভিনয় দিয়ে জয় করেছেন অগণিত দর্শক হৃদয়। অভিনয় করেছেন ২৭টি সিনেমায়। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ অভিনেতার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। আজ তার ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রিয় সালমানকে নিয়ে কথা বলেছেন তার চার সহকর্মী
মৌসুমী
২৫ বছর আগের এই দিনে একটি খবর ঘূর্ণিঝড়ের মতোই হৃদয়ে আঘাত করেছিল। ইমন [সালমান] আর নেই- শুনতে হয়েছিল এই অবিশ্বাস্য সংবাদ। কষ্ট বুকে চেপেই তাকে বিদায় জানাতে হয়েছিল সেদিন। কিন্তু কখনও তাকে ভুলে যাইনি। ভুলে থাকা সম্ভবও নয় প্রিয় বন্ধুকে। ১৯৯৩ থেকে ৯৬ সাল, মাত্র চার বছরের অভিনয়জীবন সালমানের। চলচ্চিত্রে অনেক কিছু দিয়েছে সালমান, যা দীর্ঘ সময়েও অনেকে পারেনি। অনবদ্য অভিনয় দিয়ে সালমান জয় করে নিয়েছিল অগণিত দর্শক-হৃদয়। তাই তো এখনও জানতে ইচ্ছা করে, ক্যারিয়ারের শীর্ষে থেকেও সে কেন লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেল? জানি, এ প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যাবে। তাই এ প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে স্মৃতি রোমন্থনে ডুবে যেতেই ভালো লাগে। এভাবেই কল্পনায় এখনও তার সঙ্গে দেখা হয়। সালমান ছিল একচ্ছত্র নায়ক। তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চলচ্চিত্র শিল্প যতদিন থাকবে, সালমান ততদিন বেঁচে থাকবে।
শাবনূর
চলচ্চিত্রে জুটি হওয়ার পাশাপাশি যে মানুষটি ছিল বন্ধু, পরামর্শক, সমালোচক এবং ভালো কাজের অনুপ্রেরণাদাতা- সে একজনই, সালমান শাহ।
দুই যুগ পরও চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার শূন্যতা পূরণ হয়নি। হয়তো কোনোদিন হবেও না। তার কারণ, সালমান তার সময়ের চেয়ে নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখার চেষ্টা করত। যে জন্য অভিনয়ে বারবার নিজেকে ভেঙে নতুন রূপে পর্দায় তুলে ধারার চেষ্টা করেছে। সে কারণেই সালমান আজ চলে যাওয়ার ২৫ বছর পরও প্রাসঙ্গিক। আমার ভালো লাগা এখানেই, ক্যারিয়ারের প্রথম ভাগে সর্বাধিক ছবিতে তার সঙ্গে জুটি হওয়ার সুযোগ হয়েছে। একসঙ্গে ১৪টি ছবিতে জুটি হয়েছি আমরা। কিন্তু এই জুটি যে একদিন ভেঙে যাবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। তবু সে চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। তার শূন্যতা আমার মতো সিনেমাপ্রেমী অনেকের মনে তাই আজও আঁচড় কেটে যায়।
সোহানুর রহমান সোহান
সালমান শাহ চলচ্চিত্রের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। ২৫ বছরেও সালমান শাহর শূন্যতা আমরা সামান্যও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তাকে মর্মে মর্মে এখনও উপলব্ধি করি। তার মৃত্যু আমাকে এখনও কাঁদায়। কয়েক দিন আগে সিলেট গিয়েছিলাম। দেখলাম, অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে সালমানের কবর। খুবই মর্মাহত হয়েছি। ৬ সেপ্টেম্বর আমার জীবনের একটি আনন্দের দিন ছিল। কারণ, এই দিনে আমার মেজো মেয়ের জন্ম হয়েছিল। এখন ৬ সেপ্টেম্বর আমার কাছে আনন্দ-বেদনার। ২৫ বছর কেটে গেল। এখনও সালমানের মৃত্যুরহস্য উন্মোচিত হয়নি- এটা বড় আক্ষেপ। সালমানের মৃত্যুর পর যাদের জন্ম, তাদের কাছেও সেরা নায়ক সালমান। সে রাজপুত্র ছিল; রাজপুত্রই থাকবে। দোয়া করি, তাকে যেন আল্লাহ বেহেশতে স্থান দেন।
আগুন
সালমান শাহর সঙ্গে পরিচয় আগেই ছিল। তার প্রথম ছবি 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত'-এ কাজ করতে গিয়ে পরিচয় রূপ নেয় বন্ধুত্বে। ছবিটি মুক্তির পর পাগলের মতো ব্যস্ত হয়ে গেল সে। আমাদের দেখা হতো এফডিসিতে কিংবা সিম্ম্ফনি স্টুডিওতে। সেখানে গানগুলো রেকর্ড হতো। বেশিরভাগ প্লেব্যাকের সময় সালমান স্টুডিওতে চলে আসত, জানার চেষ্টা করত। আড্ডা-গল্পে কাটত আনন্দময় সময়। আমার কণ্ঠ তার ঠোঁটে এমনভাবে ম্যাচ করে গিয়েছিল; মনে হতো, ওরই গান। সেও তেমন মনে করত; আগুন যখন গাইছে, ওটা তার গান। এখনও প্রিয় সালমানের কথা মনে পড়লে খারাপ লাগে। তার স্থান দখল করার মতো এখনও কেউ আসেনি; আর আসবেও না।