পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, এসব আলোচনার মূল বিষয় হবে মানবাধিকার ও সরকারের সংস্কার উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ইস্যুতে প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে।
এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তির বছর। একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মাইলফলক উপলক্ষে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রফেসর ইউনূসের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ একটি উচ্চ পর্যায়ের সংবর্ধনার আয়োজন করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদলের নেতারা, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান এবং সম্ভবত কিছু রাষ্ট্রপ্রধান এতে উপস্থিত থাকবেন।
বাংলাদেশের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারে, এমন সরকার ও রাষ্ট্রের প্রধানদের নাম জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিশ্চিত অংশগ্রহণ এখনও অনুমানমূলক।
পূর্ববর্তী প্রতিনিধি দলের বিপরীতে, যা কিনা বিগত বছরগুলোতে ১০০ থেকে ৩০০ সদস্যের মধ্যে ছিল, এই বছরের প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা ৫৭ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, যার অধিকাংশই মূলত নিরাপত্তা কর্মী।
হোসেন ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাই এটি নিশ্চিত করছি যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) সরাসরি দায়িত্বপ্রাপ্তরাই শুধুমাত্র প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাকবেন। তিনি জানান, জাতিসংঘের ৭৩তম এবং ৭৪তম সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে যথাক্রমে ৩৪৪ ও ৩৩৫ জন ছিলেন। ৭৫তম অধিবেশন কোভিডের কারণে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোভিড বিধিনিষেধ সত্ত্বেও, ১০৮ জন ৭৬ তম অধিবেশনে, ১৩৮ জন ৭৭ তম অধিবেশনে এবং ১৪৬ জন ৭৮ তম অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বলতে পারি না কেন বড় প্রতিনিধি দল আগে যেত, আমি জানি না। কিন্তু বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ব্যয় হ্রাস করা দরকার এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের অনুমতি নেই।’
তিনি বলেন, প্রফেসর ইউনূসের বৈশ্বিক খ্যাতি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগের জন্য অসংখ্য আমন্ত্রণসহ সাক্ষাৎকারপ্রার্থী বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর উল্লেখযোগ্য মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তবে নিউইয়র্কে তার তিন দিনের সংক্ষিপ্ত অবস্থানের কারণে সব অনুরোধ রক্ষা করা কঠিন হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দুই নেতার সময়সূচি না মেলার কারণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে না। তবে হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইউএনজিএ’র পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লী কীভাবে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভাল ‘কাজের সম্পর্ক’ বজায় রাখতে পারে, তা নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি তিনি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক, কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক, ইসলামিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (ওআইসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) বার্ষিক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
হোসেন বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সাইড ইভেন্টের আয়োজন করছি।’ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বহুপক্ষীয় কূটনীতি, বিশেষ করে জাতিসংঘের মাধ্যমকে তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করে। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের এজেন্ডায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিটি বিষয় বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সকল প্রাসঙ্গিক ইভেন্টে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এবারের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য “কাউকে পেছনে ফেলে নয় : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক মর্যাদার জন্য একসঙ্গে কাজ করা।”